নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এবছর অগ্রহায়নের শুরুতেই শীতের প্রকোপ দেখা দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। বিশেষ করে রাতে এর প্রকোপ বেশি। পৃথিবীতে মহামারী আকারে ধারন করছে করোনা ভাইরাস। শীতে এর প্রকোপ বাড়তে পারে বলে ধারনা করছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ঠিক তখনেই প্রচন্ড শীতে কাপছে বরিশালের লঞ্চ টার্মিনালে ছিন্নমূল মানুষগুলো। রাত দেড়টা। বরিশাল নৌবন্দরের বারান্দায় শুয়ে আছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক ছিন্নমূল শিশু ও নারী-পুরুষ। লঞ্চঘাটের পন্টুনে চাঁদর বিছিয়ে মাথায় পলিথিনের বালিশে শুয়ে থাকা কয়েকজন পথশিশু পায়ের শব্দেই উঠে বসেন। বলে ওঠে, ‘মামা শুধু ছবি তুলবেন, কিছু দিবেন না” এবার আগেভাগেই অনেক শীত পরতে আছে রাইতে ঘুমাইতে কষ্ট হয়। যদি আমাগো কয়ডা কম্বল দেতেন ভালো হইতো। রাব্বি নামে এক পথশিশু খুব আগ্রহের সঙ্গে এসে বলে, সারাদিন এখানে ওখানে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে তিন বেলা খেয়ে চলে যায় কোনো রকম।
কিন্তু রাতের বেলা ঘুমাতে আসলে অনেক কষ্টে কাটাতে হয় প্রতিটি রাত। ওরা ৪ বন্ধু এক সাথেই পল্টুনে চাদর বিছিয়ে রাতে ঘুমায়। ওদের মধ্যে সজল নামে একজনের চাদর ও রুবেলের একটি কম্বল এই দুটোই ওদের রাতের বিছানা আর পলিথিনের বালিশ এই হচ্ছে ওদের ৪ বন্ধুর সম্বল। গত(২৭ নভেম্বর)শুক্রবার রাতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকায়।
দিনের চেয়ে রাতে পুরোটাই উল্টো বরিশাল নগরী। দিনে বিভিন্ন স্থানের মানুষের যাতায়াতের ব্যস্ততায় এই সকল রাব্বিদের চোখে পড়ে না। কিন্তু রাতে নীরব নগরীর এই অংশটুকুর খেয়াল রাখার যেন কেউই নেই। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ হতে থাকে বরিশাল নগরীর আধুনিক নৌ-বন্দর । কমতে থাকে পথচারীর সংখ্যা। মানুষের সঙ্গে যেন ঘুমের প্রস্তুতি নেয় ব্যস্ততার শহর বরিশাল। উষ্ণতার ছোঁয়ায় মানুষ যখন ঘুমে বিভোর, তখন এ শহরে হাজারও ছিন্নমূল মানুষ অপেক্ষায় থাকে কখন শেষ হবে শীতের রাত। দেখা যাবে সকালের সূর্য। কমবে শীতের কষ্ট। চলছে হেমন্তকাল অগ্রহায়ন মাস। বাংলা ঋতুক্রমে পৌষ মাসে শুরু হয় শীতকাল।তবে প্রকৃতি কোনো নিয়ম অনুসারে তার কার্যক্রম পরিচালনা করেনা। প্রতি বছর যেখানে উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে পৌষ মাসে শীতের আমেজ শুরু হয় এবারে তার পুরটাই ব্যতিক্রম।আমরা সকলেই জানি পৌষ মানেই চারদিকে কুয়াশার বিস্তার। এবারে অগ্রহায়নের শুরুতেই কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যায় পুরো দক্ষিণাঞ্চল। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শীতের কাঁপন, বাতাসে শীতের আমেজ। গত কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বরিশালে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এরমধ্যে দুই দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গরম কাপড় না থাকায় দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতকাল বড় কষ্টের। শীতকাল এলেই দরিদ্র অসহায় মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে যায়। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে।শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাতের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২৪/২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেখান থেকে হঠাৎ করে শুক্রবার রাত ৯টায় তা নেমে আসে ১৮.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রাত ১২টায় রেকর্ড করা হয় ১৬.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শনিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৬.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে শৈত্যপ্রবাহ। সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা বাড়ার কথা। তাই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।এই শীতে, শীতার্তদের পাশে আসুন সবাই মিলে সহায়তার হাত বাড়াই এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাই।
Leave a Reply